আমার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় তাহের ভাইয়ের অনন্ত যাত্রার খবর পেলাম ফজরের আগেই। চট্রগ্রাম থেকে মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি লুৎফর ভাইয়ের ফোনে খবরটা শুনেই তার মাগফিরাত কামনা করলাম।
বছর খানেক আগে অসুস্হ তাহের ভাইকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। চট্রগ্রাম শহরের বাসায়। তখন স্মরন ও স্মৃতি শক্তিতে তাহের ভাইকে বেশ এলোমেলো মনে হচ্ছিল। কাউকে না বললেও দুশ্চিন্তা হচ্ছিল যে, তাহের ভাইকে আমরা বোধ হয়ে হারাতে যাচ্ছি। মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাহের ভাই সত্যিই চলে গেলেন।
বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনে ইসলামী ধারা সৃষ্টিতে তাহের ভাই ছিলেন প্রথম সারির নেতা। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বৃহত্তর চট্রগ্রামের তিনি দীর্ঘদিনের বিভাগীয় সভাপতি। চট্রগ্রামের শ্রমিক ময়দান তথা বন্দর, রেল, পাটকল, দোকান কর্মচারী, হোটেল শ্রমিক, রিক্সা, সিএনজি চালক, হকার্স, পরিবহনসহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অগ্রগতিতে তাহের ভাইয়ের দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। চট্টগ্রামের পথে প্রান্তরে-নগরে বন্দরে তার সংগ্রাম মুখর পথচলা কর্মীদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের তিনি সহ- সভাপতি ছিলেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের কয়েকদিন ব্যাপী আয়োজন করতো ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ, চট্রগ্রাম। তাহের ভাই ছিলেন সেই সমাজকল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতি।
বর্ষিয়ান জননেতা, শ্রমিকনেতা ও সমাজসেবক তাহের ভাই ছিলেন সদা কর্মমুখর কাজপাগল একজন মানুষ।তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মাধুর্যভরা গাম্ভীর্য নেতা-কর্মীদের কাছে তাকে অনন্য উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছিল। খুব সাদাসিধে এ মানুষটার মুখে যেন মুচকি হাসি লেগে থাকতো। মৃদুভাষী তাহের ভাইয়ের মধ্যে মানুষকে কাছে টানার একটা মোহনীয় শক্তি ছিল।
আমার সাথে তাহের ভাইয়ের পরিচয় প্রায় তিন যুগের।আমি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় বৈঠকাদিতে খুলনা থেকে যখন ঢাকায় আসতাম তখন দেখতাম তাহের ভাইকে। সভাপতির পাশের চেয়ারে বসা। অতি সাধারন পান্জাবী পরিহিত মোটা ফ্রেমের চশমার ভেতর দিয়ে তাহের ভাইয়ের গাম্ভীর্যপূর্ন চাহনি আমাকে আকৃষ্ট করতো। কাছে টেনে স্নেহময় আচরণে তিনি আপন করে নিতেন আমাকে। চট্রগ্রাম সফরে গেলে তাহের ভাইয়ের কি অকৃত্রিম আথিতেয়তা! আজও ভুলতে পারিনা আমি।
বার্ধক্য ও অনেকগুলো রোগে ভুগছিলেন তাহের ভাই। ৮২ বছর বয়সে স্ত্রী ও ৫ সন্তান রেখে আজ পরম করুনাময়ের সান্নিধ্যে চলে গেলেন। মহান দয়াময় রব প্রিয় তাহের ভাইকে মাগফিরাত দান করে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসাবে কবুল করুন। স্বজনদেরকে সবর এখতিয়ার করার তাওফিক দান করুন।
অনেক কিছুই শেখার আছে এই নেতার কর্মময় জীবন থেকে। ইসলামী আন্দোলনের ত্যাগী এই নেতা তাহের ভাই জনতা ব্যাংকের অফিসার থাকা অবস্থায় সদস্য হবার জন্য সুদী ব্যাংক থেকে রিজাইন করেছিলেন ১৯৬৯ সালে। আমরা এমন ত্যাগ কতজন করতে পারি আল্লাহর জন্য ?
তাহের ভাই, আপনাকে আমরা ভুলবো না। আপনি আমাদের প্রেরণা হয়ে দোয়ায় থাকবেন আজীবন।আল্লাহ আপনার সারা জীবনের দ্বীনি খিদমাত কবুল করে তাঁর রহমতের ছায়ায় স্হান দান করুন।
আমীন, ইয়া রাব্বুল আলামীন।