২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার যে উচ্চাকাক্সক্ষী ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট পাশ করা হয়েছে সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৩০ জুন ২০২১ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন:
“অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মোস্তফা কামাল ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর আমরা বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কতিপয় পরামর্শ দিয়েছিলাম। দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণের পক্ষ থেকে বাজেট সম্পর্কে বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটকে পাশ করানো হয়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এটি একটি ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট। বাজেটে লক্ষমাত্রা অর্জনের যে টার্গেট রাখা হয়েছে তা অলিক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। বাজেটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কৃষি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণ খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। এছাড়া শিল্প খাতে বিনিয়োগের বিষয়টি বাজেটে তেমন গুরুত্ব পায়নি। ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে থাকলেও তা বিনিয়োগের ব্যাপারে বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা নেই। আর্থিক নিরাপত্তা না থাকায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছে না। বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিরও কোনো দিক-নির্দেশনা বাজেটে নেই।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করবে। কালো টাকা সবসময় কালোই। এটিকে সাদা বলার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চহারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান মূলত একটি অনৈতিক কাজকে বৈধতা দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করা হয়েছে।
বাজেটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা নেয়া হয়নি। দেশ আজ মাদক দ্রব্যের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। সর্বত্রই মাদকের সয়লাবের কারণে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মহীন হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশে ফিরে এসে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাজেটে তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। দেশে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যাপারে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়নি। এই বাজেটের মাধ্যমে মূলত প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
এ বাজেটে দলীয় হীনরাজনৈতিক স্বার্থকে চরিতার্থ করার এবং মেঘা দুর্নীতিকে লালন করার সব সুযোগ বিদ্যমান রাখা হয়েছে।
সর্বোপরি বলা যায় এটি একটি উচ্চাকাক্সক্ষী ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট, যেখানে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য চমকপ্রদ বক্তব্য প্রদান করলেও তা বাস্তবায়নে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, পাশকৃত বাজেটে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এই বাজেট জনগণের কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।”