বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারের মতো ভাষা শহীদরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এমন আত্মত্যাগের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও ভাষা শহীদদের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার প্রচলন আজও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র, প্রকৌশল বিদ্যাসহ গবেষণা গ্রন্থগুলো এখনও বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি। তাই ভাষা শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও বাংলা ভাষাকে সর্বজনীন করতে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসার সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত প্রমুখ।
মিয়া পরওয়ার বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ছিনতাই হলেও মূলত ইসলামপন্থীরাই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন। তমুদ্দন মজলিশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটে। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের তুখোর ছাত্রনেতা। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে মানপত্রও পাঠ করেছিলেন। কিন্তু নেতিবাচক রাজনীতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দলীয় সংকীর্ণতার কারণেই অধ্যাপক গোলাম আযম ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে অধ্যাপক গোলাম আযমকে গণমানুষের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। তিনি ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং হীনমন্যতা পরিহার করে তাকে মনোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। ১৯৭১ সালে তা ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু মহান স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও আমরা স্বাধীনতার উন্নতম চেতনা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হইনি। শ্রেণি বিশেষের অপরাজনীতি ও ক্ষমতালিপ্সার কারণেই স্বাধীনতার সুফলগুলো আজও আমাদের কাছে অধরায় রয়ে গেছে। দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নামে চলছে সভ্যতার ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রহসন। তাই দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবারো সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় আমাদের জাতিস্বত্ত্বাই অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।