বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পৃথিবীর অসংখ্য ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। ১০ মহররম পবিত্র আশুরায় রয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষা ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের অনেক বড় বড় বিষয় ও ঘটনাদি আশুরার সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে হৃদয় বিদারক ঘটনা হলো কারবালার শাহাদাৎ। সেদিন কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ বাহিনীর বর্বরতা ও মানবতার মুক্তিদূত রাসূল (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর শাহাদাতের ইতিহাস মুসলমানদের জন্য ত্যাগের এক অনন্য নজির স্থাপন করে। অথচ কারবালার প্রকৃত ইতিহাস ও শিক্ষাকে বিকৃত করে ভারতীয় উপমহাদেশে মূল ঘটনা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। আশুরার এই মহিমান্বিত দিনে শুধু শোক ও মাতম নয়, প্রতিবাদের সংগ্রামী চেতনা নিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। এটাই মহররমের অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
আজ শনিবার রাজধানীর এক মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত পবিত্র আশুরার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন সহ জামায়াত শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আশুরা দিবস ১০ই মহররমের সাথে মুসলিম মিল্লাতে অনেক ঘটনা প্রবাহ এবং ইতিহাস জড়িত রয়েছে। প্রতিটি ইতিহাস থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য রয়েছে সুমহান শিক্ষা। আমাদেরকে সেই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। ইসলামের মৌলিক নীতিমালা বা আদর্শে কোন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের স্থান নেই। যারা অত্যাচারী ও মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন তাদের মোকাবেলায় সব সময় শাহাদাতের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত পেশ করতে হয়েছে। রাষ্ট্র বিধান ও ইসলামী দ্বীন কায়েম করতে শাহাদাতের তামান্না আজও দেশে দেশে দৃশ্যমান। তাই দেশকে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শক্তির অপশাসন ও দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে সত্য ও ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সিসাঢালা প্রাচীরের মতো অবিচল থাকতে হবে। মূলত ত্যাগ ও কুরবানি ছাড়া কখনোই ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসের বহুল আলোাচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ। এদিনে ইতিহাসের নানাবিধ ঘটনার সমন্বয় ঘটেছে। সর্বশেষ ৬১ হিজরীতে রাসূল (স.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) তার পরিবার-পরিজনসহ কারবালা প্রান্তরে আত্মবিসর্জন দিয়ে যে ত্যাগ ও কুরবানীর মহিমা স্থাপন করে গেছেন তা ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই আমাদেরকে শহীদে কারাবালার তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন ও বাধা-প্রতিবন্ধতায় অবিচল থেকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলকে বেগবান করতে হবে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি তা থেকে মোটেই আলাদা নয়। সরকার দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করতেই সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে নিজেরাই জননিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইসলামী আদর্শে বলিয়ান হয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করতে হবে।
এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য ইমাম হোসাইন (রা) এর এই বিশাল আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায়ের পক্ষে প্রতিরোধ সংগ্রামের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।