বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ, দেশ ও জাতিসত্তাবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্রের অংশ। অত্যন্ত বর্বর ও পৈশাচিক কায়দায় খুনীরা প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করার ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা সভ্যতার সকল নির্মমতাকে হার মানিয়েছে। আর সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়েছিল বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী নেতৃত্বাধীন বাম জোট। তিনি ২৮ অক্টোবরের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং নিহতদের শাহাদাত কবুলের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদশে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত প্রমূখ।
মিয়া পরওয়ার বলেন, শাহাদাত প্রত্যেক মু’মিনেরই কাঙ্খিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কালামে হাকীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না’। (সুরা বাক্বারা : ১৫৪) হাদিসে রাসুল (সা.)এ বলা হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর আর দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাইবে না।…. অবশ্য শহীদের কথা আলাদা। সে চাইবে যে, তাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনা হোক এবং দশবার তাকে আল্লাহর পথে শহীদ করা হোক। এই কারণে যে, সে তার ইজ্জত ও সম্ভ্রম দেখতে পাবে। (বুখারি ও মুসলিম) তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে দ্বীন কায়েমের প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। মূলত ২৮ অক্টোবরের খুনীদের বিচার হয়নি বলেই দেশে গুম, খুন, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, বিচারবর্হিভূত হত্যার মহোৎসব চলছে। এমতাবস্থায় ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই দুর্নীতি, লুটপাট ও অবক্ষয় এখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। দেশে নারী নির্যাতন এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। মায়ের জাতির মর্যাদা আজ দারুণভাবে ভুলুন্ঠিত। শুধু আইন করেই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং নারী জাতিকে ইসলাম যে মর্যাদা দিয়েছে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা। মূলত সিলেটের এমসি কলেজ ও নোয়াখালীতে গৃহবধু নির্যাতনের গোটা জাতিকেই স্তম্ভিত ও অপমানিত করেছে। দেশে নারী নিগ্রহের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে। আর এসব ঘটনার অধিকাংশ ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীনরাই জড়িত।
তিনি আরও বলেন, মূলত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন নামের প্রহসন কমিশন দিয়েই ‘মিডনাইট’ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এমনকি সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনেও ব্যাপকভাবে ভোট কারচুপীর ঘটনা ঘটেছে। মূলত বর্তমান কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কমুক্ত করতে বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের কোন বিকল্প নেই।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সশস্ত্র বাহিনী জাতির গৌরব হলেও বর্তমান সরকারের আমলে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ৫৭ জন দেশপ্রেমী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করা হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান খুন ও সম্প্রতি ঢাকা-৭ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ হাজী সেলিমের ছেলে এরফান কর্তৃক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমদ খান মারধর ও নাজেহালের শিকার হয়েছেন। যা দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার নীলনকসারই অংশ। তাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই গণবিরোধী সরকারের পতনের কোন বিকল্প নেই। তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।