বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি:নং-বি-২১৩৩) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কৃষি ও কৃষকরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলেও অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্রমাগত অবহেলা এবং ন্যায্য মুল্যে না পাওয়ার কারণে পুরো কৃষি সেক্টরে হতাশা সৃষ্টি করেছে। ফলে কৃষক সমাজ কৃষিকাজে উৎসাহ হারাতে বসেছে।
কৃষকের কোন সংগঠন না থাকার কারণে কৃষকরা এক সুরে কথা বলতে পারেনা,ফলে কেউ কৃষকের কথা শুনেনা। যদি সম্মিলিতভাবে বলা যায়,তাহলে সবাই শুনবে। তাই আগামীতে কৃষি সেক্টরে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে,কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য আদায়ে, কৃষকদের সংগঠিত করে তাদের অধিকার আদায়ে দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।গতকাল বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি:নং-বি-২১৩৩) এর নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাসান রাজুর পরিচালনায় এসময় অন্যান্য দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, আবুল হাসেম, আব্দুল্লাহ বাছির কৃষিজীবি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ গাজী আবুল কাশেম সহ নির্বাহী কমিটির সদস্য মো: রেজাউল করিম, সাইফুল ইসলাম, এ্যাড. আব্দুর রহমান, মো: শামীম আহমেদ প্রমুখ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকের অবস্থা এখন নাজেহাল। অপার সম্ভাবনার এই খাতটি অবহেলার সর্বশেষ দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। যারা দিন-রাত ঝড়-বৃষ্টি একাকার করে নিরলস পরিশ্রম করে জমিতে সোনার ফসল ফলায়, তারা প্রতি বছরই কষ্টে অর্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পায় না এবং সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হয়। সম্প্রতি ন্যায্যমূল্য না থাকায় ধানক্ষেতে আগুন দিয়ে এবং রাস্তায় ধান ছিটিয়ে অভিনব প্রতিবাদের ঘটনাও ঘটেছে। অথচ সরকার কৃষকের মূল সমস্যার সমাধান এবং ধান সহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বরং ধানের মূল্য নিয়ে কৃষিমন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও অনেকটাই দায়সারা ছিলো।তিনি মনে করেন কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিই আসল সমস্যা। তাই এ কথা সরকার যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততই জাতির কল্যাণ। এতে করে কৃষক যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি ভোক্তারা প্রত্যাশিত মূল্যে কৃষিপণ্য কিনতে পারবেন। তাই সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষকদের ন্যায্য দাবি ও চাহিদা পূরণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার,দায়িত্বশীলদের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন,কৃষক সমাজকে বুঝাতে হবে এক মাত্র ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন হলেই শ্রমিক সমাজের দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি সম্ভব এবং আগামীতে কৃষি সেক্টরে অব্যবস্থাপনা,দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য, কৃষকদের সংগঠিত করে তাদের অধিকার আদায়ে দায়িত্বশীলদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বৈঠকে বিগত মাসের কাজের পর্যালোচনা ও
আগামী দিনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরে নির্বাহী কমিটির সভায় সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে সরকারের কাছে ৬ দফা দাবী জানানো হয়:
১. কৃষক বান্ধব জাতীয় কৃষি নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. কৃষকদের পণ্য উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
৩. উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা এবং ঝামেলাহীন ভাবে বিক্রির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
৪. সরকারি উদ্যোগে শাকসবজিসহ পচনশীল কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে।
৫. কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, এ জন্য সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৬. প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকের কৃষি ঋণ মৌকুফ করতে হবে।