মানুষের চরিত্র, সমাজ ও রাষ্ট্র সংশোধনের জন্য একটা হাতিয়ার প্রয়োজন। এ হাতিয়ার শুধু ইসলামের কাছেই রয়েছে। এ হাতিয়ার মহান আল্লাহ পাঠিয়েছেন নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানবতার মুক্তির জন্য। সে হাতিয়ার হলো একটি আদর্শের উপর বিশ্বাস ও দৃঢ় প্রত্যয়। যার ভিত্তিতে মানসিকতা, চরিত্র, রুচি ও জীবনের মূল্যবোধ গড়ে তোলা হয়। যে বিশ্বাস একটা জীবন দর্শন পেশ করে। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিক্ষা দেয়। জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ শিক্ষা দেয়। জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। তা হলো আখিরাত বা পরকালের উপর দৃঢ় বিশ্বাস। যা এক অদৃশ্য শক্তির কাছে প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এ বিশ্বাস শিক্ষা দেয় যে, মানুষকে সৃষ্টি করে এখানে লাগামহীন ছেড়ে দেয়া হয়নি যে, সে এখানে যা খুশি তাই করবে। সে কোনো ভালো কাজ করলে তার পুরস্কার দেওয়ার কেউ নেই এবং অসৎ কাজ করলে তার জন্য শাস্তি দেবার কেউ নেই- এমনটি মোটেও নয়। বরং আসল কথা, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মরনের পর তার কাছেই তাকে ফিরে যেতে হবে। তারপর তার দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি ভাল মন্দ কাজের হিসাব তার কাছে দিতে হবে।
দুনিয়ার জীবনে অন্যায় করে থাকলে, দুষ্কৃতিকারী হলে, সন্ত্রাসবাদী হয়ে মানুষের জীবন ও ধন সম্পদ ধ্বংস করলে, ইনসানিয়াত নষ্ট করলে তার সমুচিত শাস্তি তাকে পেতেই হবে। শাস্তিদাতার শাস্তিকে ঠেকাবার কোন শক্তিই কারো হবে না সেদিন। তখনকার শাস্তি হবে চিরন্তন, কারণ সে জীবনের শেষ হবে না। এটাই হলো পরকালে বিশ্বাস। সেদিনের শাস্তি অথবা পুরস্কারদাতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজেই।
একমাত্র এ বিশ্বাসই মানুষকে “মানুষ” বানাতে পারে। নির্দয় পাষণ্ড কে স্নেহময় ও দয়াশীল বানাতে পারে, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষদের মুক্তি দিতে পারে। চরিত্রহীন কে চরিত্রবান, দুষ্কৃতিকারী লুটেরাকে বানাতে পারে মানুষের জীবন ও সম্পদের রক্ষক। সন্ত্রাসীকে বানাতে পারে মানবদরদি ও মানবতার বন্ধু। দুর্নীতিবাজকে করতে পারে দুর্নীতি নির্মূলকারী। পৃথিবী জুড়ে সৃষ্টি করতে পারে ইনসানিয়াত সমৃদ্ধ নতুন দুনিয়া।
আল্লাহ তায়া’লা ও আখেরাতের প্রতি এমন বিশ্বাসী হয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা) এর আদর্শিক নেতৃত্বের অধীনে যদি বিশ্বের পথহারা মানুষ তাদের পথ খুজে পায়, তাহলে সর্বত্র মানুষের রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রত্যেকে তার জানমালকে নিরাপদ মনে করবে। দুর্নীতির মানসিকতা দূর হয়ে যাবে। প্রশাসন ব্যবস্থা, আইন ব্যাবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা ব্যাবস্থা , চিকিৎসা, বিচার-আচার বা আদালত সবকিছুই চলতে থাকবে সঠিকভাবে এবং মানুষের কল্যাণের জন্য।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজেই আইন ভঙ্গ করবে না। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হবে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করবে না। কেউ কারো সাথে প্রতারণা করবে না। অস্ত্রের সাহায্যে কেউ জাতির ঘাড়ে ডিক্টেটর হয়ে বসবে না। মজলুমের আহাজারি থাকবে না।
কাউকে গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ হতে হবে না। অন্ন বস্ত্রের অভাবে কারো হাহাকার শোনা যাবেনা। চিকিৎসার অভাবে কাউকে যন্ত্রণায় কাতরাতে হবে না। আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসের এসবই হল পার্থিব মঙ্গল ও সুফল।
কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য যে, ক্ষমতাগর্বী লোকেরা, স্বৈরাচারী শাসকরা এবং মহান আল্লাহ ও আখেরাতে অবিশ্বাসী বস্তুবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার ধারক -বাহক ও সেবাদাসরা এ মহান সত্য উপলব্ধি করতে পারে না।
বস্তুত ইসলামী সমাজ ও সভ্যতাই পারে আজকের নীপিড়িত মানবতার প্রকৃত মুক্তি নিশ্চিত করতে।
তাই জীবনের যেসব ক্ষেত্র ও বিষয়ের সাথে মানুষের জীবন-জীবিকা সুখ-দুঃখ জানমাল ও ইজ্জত-আব্রু ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এককথায় ব্যক্তি, পরিবার, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, যুদ্ধ, সন্ধি বন্ধুত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন -শাসন ও প্রভুত্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আখেরাতের উপর ঈমানের প্রকৃত দাবী।
এ দাবী আদায়ের সংগ্রামকে বলা হয় ” আল জিহাদু ফী সাবিলিল্লাহ ” আল্লাহর পথে জিহাদ। আর এর সফল পরিণতিই হলো ইক্বামাতে দ্বীন বা দ্বীন ইসলামের প্রতিষ্ঠা। যার জন্য হয়েছিল সকল নবীর আগমন। আখেরাতের সাফল্যের জন্য এ কাজ অপরিহার্য। শেষ নবীর ( সা) জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এ কাজের জন্যই ব্যয়িত হয়েছে। এ কাজের পূর্ণ অনুসরণ প্রকৃত মুমিনের একমাত্র কাজ। এরই আলোকে একজন মুমিনের সারা জীবনের কর্মসূচি নির্ধারিত হওয়া অপরিহার্য কর্তব্য।
জামায়াতে ইসলামী এই আদর্শেরই এক সংগ্রামী কাফেলার নাম। এই কাফেলার দীর্ঘ চলার পথে ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় দগ্ধ হয়ে নেতা কর্মীরা সত্যের সে মহান সাক্ষ্য পেশ করে চলেছেন নিরন্তর ও বিরামহীন গতিতে।
এ শ্বাস্বত আদর্শের জন্য পৃথিবীর সবকিছুকে তুচ্ছ প্রমান করে কাফেলার প্রিয় শহীদ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির মঞ্চে আল্লাহপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ন হবার উজ্জ্বল উদাহরন পেশ করেছেন। যা দুনিয়াবাসীর কাছে সত্যের পথে আত্ননিবেদনে অনন্য ও চির প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে যুগ যুগান্তর ধরে।
এ কাফেলা অদম্য, অপ্রতিরোধ্য ও মৃত্যুভয়হীন চেতনায় উজ্জীবিত।