বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর কেউ শেখ হাসিনার নিদের্শিত গণহত্যা থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি গর্ভবর্তী মায়েদেরকেও পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনার স্পষ্ট নিদের্শ ছিলো যে কোন কিছুর বিনিময়ে তার ক্ষমতা ধরে রাখা। এজন্য লাখ-লাখ মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে হলে করো তবু তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা জানে না, দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে দেশ পরিচালনা করা যায় না। তাই ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ৩৬ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতাই ছাড়তে বাধ্য হয়নি, দেশ ছেড়েও পালিয়ে গেছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শনিরআখড়ায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের কোন নেতাকর্মী কেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি?- কারণ তারা এক আল্লাহকে ভয় করে। কোন অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোষ করেনি। জনগণের সম্পদ লুট করেনি। বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জনগণের সম্পদকে আমানত হিসেবে বিশ্বাস করে। সেজন্য জামায়াতের নেতারা দুর্নীতি করে না, চুরি করে না। জনগণের খেদমতে জীবন উৎস্বর্গ করে দেয়, দিয়েছে এবং প্রয়োজনে আরো দিবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও যাত্রাবাড়ী-মাতুয়াইল থানা আমীর মিজানুর রহমান মালেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন। বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী যাত্রাবাড়ী উত্তর থানা আমীর মো. শাহজাহান খান, ডেমরা উত্তর থানা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, ডেমরা পশ্চিম থানা আমীর মাওলানা বায়োজীত হাসান, যাত্রাবাড়ী দক্ষিণ থানা আমীর এডভোকেট এ.কে আজাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মতবিনিময় সভা শেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৭ জন শহীদের পরিবারের মাঝে ২লাখ টাকা করে ৩৪ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা ছাত্র-জনতার বিপ্লব নসাৎ করতে কখনো জুডিসিয়াল ক্যু, কখনো আনসার ক্যু, কখনো প্রশাসনিক ক্যু চালাতে চেয়েছে। আবার হিন্দু সম্প্রদায়কে মাঠে নামিয়ে দিতে চেয়েছে তাদের মন্দির ভাংচুর হবে, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ হবে বলে মিথ্যা ভয় লাগিয়ে। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তায় আমীরে জামায়াতের নিদের্শে সারাদেশে জামায়াতের কর্মীরা নিয়োজিত ছিল। আগামীতেও জামায়াতের কর্মীরা তাদের পাশে থাকবে।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের তালিকা নিয়ে নয়ছয় হলে দায় নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। তাই তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহীদ ও আহত পরিবারের তালিকা নির্ভুলভাবে দ্রুত প্রকাশ করুন। ভুক্তভোগী পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করুন। পুলিশের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক ভুক্তভোগী পরিবার জানাচ্ছে পুলিশ মামলা নিতে চাইছে না। আর পরাজিত শক্তির পক্ষে কাজ করবেন না। জনগণের জন্য কাজ করুন।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর মত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যাদের রক্তের উপর ক্ষমতায় বসে আছেন সবার আগে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তিনি আরো বলেন, একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে এবং বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে নারীর অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সম্পদ লুট হবে। কিন্তু না ইসলামে নারীর অধকার সবচেয়ে বেশি দিয়েছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত হবে না। সবার পরিচয় হবে আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নিদের্শে পুলিশের গুলিতে শ্রী সৈকত চন্দ্র দে মারা যান। তার স্ত্রী স্বপ্না রানী দে বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায় মনে করতাম জামায়াতে ইসলামী কেবলমাত্র মুসলমানদের সংগঠন। আমাদেরকে বুঝানো হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের বিতাড়িত করে দিবে। হিন্দুদের সম্পদ লুটপাট করে নিবে। কিন্তু আমার স্বামী শ্রী সৈকত চন্দ্র দে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমার পরিবারের সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছে। আজ আমাকে ২ লাখ টাকা আর্থিক সযোগিতা করতে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডে প্রমান হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের সংগঠন। এসময় স্বপ্না রানী দে, খুনি হাসিনা যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন তাকে ধরে এনে গণহত্যার হুকুমের আসামী হিসেবে বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে দাবি জানান।
শহীদ সাবিক আল হাসানের বাবা মুর্তজা আলম বলেন, ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী পকেট গেইটে তার ছেলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। এরপর থেকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিটি দিন তাদের কাছে হাজার বছরের মত মনে হয়েছে। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও পুলিশ তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো। একপর্যায়ে তার অপর ছেলে বারবার বাবাকে অনুরোধ করে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে। এভাবে উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা শহীদদের স্মৃতিচারণ করে ঘটনার বর্ননা দেন। উপস্থিত সকল শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবি জানান।