করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী যে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে এবং যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৬ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন:
“করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি ও বিধ্বস্ত উৎপাদনমুখী খাতগুলোকে টিকিয়ে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২,৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজটি একটি ঋণের প্যাকেজ। যেখানে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা খাত এবং দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসী যারা করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ব্যাপারে এবং দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠান ও খাতের সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত হচ্ছে কৃষি। এর উপখাত হিসেবে রয়েছে ডেইরী, পোল্ট্রি ও ফিসারিজ। কৃষিখাতের সাথে দেশের আড়াই থেকে তিন কোটি পরিবার সম্পৃক্ত। তারা একদিকে ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ পায়না বরং উচ্চমূল্য তা ক্রয় করতে হয়। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকেও তারা বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কোনো আর্থিক সুবিধার উল্লেখ নেই।
দেশের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নাগরিক বিদেশে প্রতিকূল পরিবেশে অর্থ উপার্জন করে তা দেশে পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশের অর্থনীতির সকল সূচকগুলো যখন নিম্নমুখী হয়, তখন প্রবাসী নাগরিকদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লাখ লাখ প্রবাসী আজ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব। অথচ প্যাকেজে তাদের সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
দিন আনে দিন খায় এমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের শ্রম দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার প্যাকেজে কিছুই বলেননি।
আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা খাত এবং প্রবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা উচিত। বর্তমান সংকটের সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে আরো বেশি করে প্রান্তিকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে শিল্প, সেবা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাতে যে অর্থায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা সবই ঋণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ভারী শিল্পের মালিকগণ স্বল্প হারে ও ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকগণ তুলনামূলকভাবে বেশি সুদে ঋণের সুবিধা পাবেন। আমরা মনে করি এ বৈষম্য ঠিক নয়। সামগ্রিক বিবেচনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাগণ বেশি আনুকূল্য পাওয়ার দাবিদার ।
অর্থ যোগান দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের। ব্যাংকগুলোর অবস্থা মোটেই ভালো নয়। তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের গৃহীত ও অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনার টাকা সরবরাহ খুবই কঠিন হবে।
তদুপরি কারা অর্থ পাবেন এবং যথাযথভাবে আর্থিক প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অনেকেই স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ এবং দুর্নীতিরও আশঙ্কা করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন “সবাই যেন সততার সাথে কাজ করেন। এই সুযোগ নিয়ে কেউ যেন আবার কোনো রকমের দুর্নীতি-অনিয়ম না করেন।”
আমরা মনে করি আর্থিক প্রণোদনার এ অর্থ কোনোভাবেই ঋণখেলাপিদের দেয়া যাবে না। জনগণের আশঙ্কা জাতির এ দুর্দিনে আর্থিক প্রণোদনার অর্থ কিছু লোভী বড় লোকদের হাতে চলে যায় কি না! কোনো সুবিধাবাদী লোভী বড় লোকেরা পরস্পরের যোগসাজসে যাতে আর্থিক প্রণোদনার অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যেতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব সরকারের।
আমরা মনে করি সততা ও স্বচ্ছতার সাথে এবং স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবেন।”