বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মহান মুক্তিসংগ্রাম ও বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের আকাঙ্খা বাস্তবরূপ লাভ করে আমরা নিজেদের একটি ভূ-খন্ড পেয়েছি অথচ আজও এই জনপদের মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতার সুফল পায়নি। বিশ্ব মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকা স্থান করে নেওয়ার পরেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অদূরদর্শিতা ও অবহেলায় আমাদের স্বাধীনতার অর্জন ম্লান হয়ে যায়। যেখানে নিকটবর্তী দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের অনেক পরে স্বাধীন হয়েও আজ বিশ্বের দরবারে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত অপরদিকে কুচক্রি মহলের অপ-তৎপরতায় বাংলাদেশ তার স্বরূপ বা স্বকিয়তা বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে উড্ডীন করার পরিবর্তে ধীরে ধীরে আধিপত্যবাদের গোলামীতে আবদ্ধ হয়েছে। দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা। বিজয়ের অর্ধশত বছর প্রায় অতিক্রম হতে চললেও স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা আজ ভু-লুন্ঠিত। তাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে এবং শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলওয়ার হোসাইন ও আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির প্রমুখ । আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য সৈয়দ সিরাজুল হক, আব্দুস সাত্তার সুমন, শাহীন আহমদ খান, আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, মহান বিজয় দিবসের এই দিনে জাতি গর্বিত ও আনন্দিত। কিন্তু সরকারের অপরাজনীতি ও ভ্রান্ত নীতির কারণেই সে আনন্দ অনেকটাই ম্লান। দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও চলাফেরার স্বাধীনতা নেই। সরকার মানুষের সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। বিরোধী মতকে দমনের জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নিজেদের পকেটে পুরে আওয়ামীলীগ দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছে। অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র করে আজ ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধকে দুটি বিপরীতমুখী শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়ার প্রচেষ্ঠা চলছে। অথচ সকল রাজনৈতিক আন্দোলনেই এদেশের ইসলামপন্থীরা ও মুসলমানরাই ছিলেন সম্মুখ সারিতে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম সহ পরবর্তী সকল আন্দোলনে এদেশের মুসলমানরা নেতৃত্ব প্রদান করেছিল। ইসলাম ছাড়া মানুষের কল্যাণের কোন পথই নেই। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ক্ষমতাসীনদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, দুঃশাসনের কারণেই স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরেও আমরা বিজয়ের সুফলগুলো পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারিনি। দেশের মানুষকে আজ নিজের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আজ ভেঙে পড়েছে, এগুলোর সংস্কারের বিকল্প নেই। সুষ্ঠ রাজনৈতিক চর্চা হতে হবে জনগণের সকল সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে। আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরাধীনতার শিকল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারলেই কেবল স্বাধীনতার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হবে। তিনি মহান বিজয়কে অর্থবহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রূহের মাগফিরাত, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের হেফাজত এবং দেশের মানুষের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।