বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ১৮৮৬ সালের শিকাগোর সংগ্রামের শ্রমিকদের দাবিগুলোর ইনসাফপূর্ণ সমাধান দিতে পারে ইসলামী শ্রমনীতি এবং দুনিয়ার মানুষের তৈরি করা নিয়ম দিয়ে ১৩২ বছর ধরে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করার ব্যর্থ চেষ্টার সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারে ইসলামের শাশ্বত বিধান। তাই শ্রমিক দিবসের অন্যতম দাবি হচ্ছে সমাজে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করার কাজকে এগিয়ে নেয়া।
গতকাল সোমবার রাজধানীর এক মিলনায়তনে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যাগে মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও মহানগরীর দক্ষিণের সেক্রেটারি মোশারফ হোসেন চঞ্চলের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ খান, সহ -সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মোহাম্মাদ উল্লাহ, লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, আতিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন আবুল হাশেম, মনসুর রহমান, নুরুল হক, আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন,প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দ্বারা যে শ্রমনীতি প্রণয়ন করিয়েছিলেন, সেই শ্রমনীতি যদি বাস্তবায়ন থাকত তাহলে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকত না। কিংবা শ্রমনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাউকে প্রাণ দিতে হতো না। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা সত্যের শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে এমন সব মানব রচিত বিধানের পিছনে ছুটছি যার পুরোটাই ভুলে ভরা। মহানবী (স.) ঘোষণা করেছিলেন, ‘তোমরা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করবে,তাদের শরীরের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে’-আমরা শ্রমিকের কল্যাণে এ কথাগুলো না মেনে সমাজতন্ত্র, পুঁজিতন্ত্র তথা মার্কস, লেলিনের মতবাদে এমনভাবে আকৃষ্ট হয়েছি যার কারণে আমাদের সত্য দেখা এবং উপলব্ধি করার অর্গান বিকল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ইসলাম শুধু শ্রমিকের স্বার্থে কথা বলেনি বরং শ্রমিক এবং মালিক উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বের তথা সাম্যের সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম একদিকে যেমন মালিককে নির্দেশ দিয়েছে, তোমরা শ্রমিকদের পাওনা ঠিকমত পরিশোধ করবে, তেমনি শ্রমিককেও নির্দেশ দিয়েছে, তোমরা মালিকের কাজে ফাঁকি দেবে না। শ্রমিক মালিকের দ্বন্দ্ব নিরসনে ইসলাম যে নীতির প্রবর্তন করেছে তার চেয়ে উত্তম কোনো নীতি আকাশের নিচে আর মাটির উপরে অতীতে সৃষ্টি হয়নি এবং ভবিষ্যতে সৃষ্টি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, মে দিবসের চেতনা যদি শুধু পহেলা মে তারিখের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় তবে এদেশের শ্রমিকদের ভাগ্য বদলাবে না কোনদিন। যে শ্রমিকদের রক্ত, ঘামকে পুঁজি করে একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড- গঠিত হয়, শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা পায়, সে শ্রমিকদের অবহেলা করার অধিকার রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তির থাকা উচিত নয়। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক নিরুপনে আমাদেরকে ইসলামমুখী হতে হবে। কেবল ইসলাম পারে শ্রমিক-মালিকের দ্বন্দ্ব দূর করে একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। তাই আসুন ইসলামী শ্রমনীতি সমাজে বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।,