বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী যুব বিভাগের উদ্যোগে এক বর্নাঢ্য ঈদ পুনর্মিলনী ও যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও যুব বিভাগের সেক্রেটারি জনাব এফ. এম. ইউনুছ। পাঁচলাইশ থানা আমীর ও চট্টগ্রাম মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক কাউন্সিলর জনাব শামসুজ্জামান হেলালীর সঞ্চালনায় উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য জনাব অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী সকলের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে প্রধান অতিথি বলেন, “ঈদুল আযহা হলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত একটি ত্যাগের উজ্জ্বল নিদর্শন। বিনা দ্বিধায় ও বিনা প্রশ্নে আল্লাহর নির্দেশ পালনের এক অনন্য দৃষ্ঠান্ত হচ্ছে ঈদুল আযহা। ত্যাগই হলো কুরবানীর আসল শিক্ষা। বর্তমান যুবকরাই পারে এই করোনায় বিপর্যস্থ পৃথিবীকে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসে ত্যাগের মহিমা তুলে ধরতে। তাই বর্তমান মহামারীর এই দূর্যোগে সমাজ থেকে সকল প্রকার জুলুম-বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভুমিকার কোন বিকল্প নেই।
সুতরাং সত্য, ন্যায় ও সুবিচারপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় যৌবন কালের ত্যাগ-কুরবাণী মহান রবের কাছে বেশি প্রিয়। এ ক্ষেত্রে হযরত ওমর (রাঃ) এর জীবনী আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি একজন রাষ্ট্র প্রধান হয়েও সাধারণ অধিনস্তদের খবর নেয়ার জন্য রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়তেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল।”
তিনি আরো বলেন,”বর্তমানে করোনা রোগীর সেবায় অপ্রতুল স্বাস্থ্য উপকরণের কারণে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। এ অবস্থায় সকলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা জাতির জন্য বিশাল কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। কোভিড আক্রান্ত জাতির সেবায় জামায়াতের সকল স্তরের জনশক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ মানব সেবা ব্যতীত সমাজের সংস্কার-সংশোধন করা কখনো সম্ভব নয়।”
প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের ত্যাগ ও কুরবানীর কথা স্মরণ করে তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশব্যাপী ইসলামী আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতৃবৃন্দ মরহুম মাওলানা শামসুদ্দিন ও অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের ও মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরীর ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি দোয়া ও তাদের রেখে যাওয়া কাজকে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য যে, প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ‘আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী’ দিবসে চট্টগ্রাম ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত সেমিণার স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করলে ভার্চূয়াল প্লাটফর্মে হামদ আর তাকবির ধ্বনীতে মুখরিত হতে দেখা যায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানরী জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিশ্ব সভ্যতার উত্থান-পতনে যুবকরাই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। নৈতিক অবক্ষয় আর সামাজিক মূল্যবোধ বিলুপ্তির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে একটি নৈতিক ও মানবিক সমাজ বিনির্মানের কারিগর হতে পারে যুবকরাই। প্রযুক্তি বান্ধব বিশ্বে যুবকদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে “প্রযুক্তির কুফলকে সুফল দিয়ে বদলে দেবার”।
যুবকদের প্রতি তিনি আরো বলেন, যুবক ভাইদের মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের উপর গবেষণা ও সাধনা করতে হবে। কেননা কুরআনের শিক্ষাই হলো একজন মুসলিম যুবকের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন ও নিয়ামত। তাছাড়া তিনি যুবকদেরকে আজান হলেই মসজিদপানে ছুটে গিয়ে প্রশান্ত চিত্তে ও সুনিবিড় আন্তরিকতা নিয়ে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য ও সাহায্য কামনার জন্য আহবান জানান এবং সব ধরণের বেহুদা-অনর্থক কাজ হতে নিজেদের বিরত রেখে আদর্শ জীবন গঠনে সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর জনাব আ.জ.ম ওবায়েদুল্লাহ্ বলেন, “পশ্চিমা সভ্যতায় প্রভাবিত যুবকরা বর্তমানে মাদকসহ নানা অপ্রীতিকর কর্মকান্ড ও নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যুব বিভাগের নেতৃত্বকে এই ক্ষেত্রে যুব ও তরুণ সমাজকে সাবলিল ও সুন্দর জীবন গঠনের দিকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। যুবকদের সব ধরণের অসমাজিক কার্যকলাপ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজনের উদ্যোগ নিতেও তিনি আহবান জানান।”
এ ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর বিশিষ্ট পরিবেশবিদ জনাব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার ও মুহাম্মদ উল্লাহ্, সাংগঠনিক সম্পাদক এম. এ. আলম চৌধুরী ও মোর্শেদুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডক্টর আতিয়ার রহমান, শ্রমিক নেতা এস. এম. লুৎফর রহমান, শিবির নেতা আমান উল্লাহ, সাদেক আব্দুল্লাহ্, ওসমান গণি প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে সহস্রাধিক যুবকের উপস্থিতির এ ভার্চুয়াল সম্মেলনে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ইসলামী সংগীত পরিবেশন করে অনুষ্ঠানকে মুগ্ধ করেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার জনাব সাইফুল্লাহ মানসুর ও মশিউর রহমান।