বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম হলেও সীমাহীন দুর্নীতি ও দলীয়করণে রেল আজ জনগনের জন্য নিরাপত্তাহীনতা ও দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল চট্রগ্রামের এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের ২১ তম দ্বি- বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এই কথা বলেন।
রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আকতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম পাটোয়ারীর পরিচালনায় কাউন্সিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, কবির আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, লালমনিরহাট জেলার উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন ও কক্সবাজার জেলা উপদেষ্টা মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রেল শ্রমিক নেতা আব্দুল আজিজ, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, আবুল কালাম আজাদ, হাফিজুর রহমান, আজাহার আলী, নাজমুল আমিন মতিন ও ওমর ফারুক প্রমুখ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, জরাজীর্ণ প্লাটফর্ম, মান্ধাতা আমলের রেললাইন, ইঞ্জিন, বগি এবং অদক্ষ চালক দিয়ে চলছে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সারাদেশের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে বেশিরভাগই হয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বে। দীর্ঘসময় ধরে রেলওয়ের নানা অব্যবস্থাপনা ও সীমাবদ্ধতার কারণে রেল দুর্ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। এতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, দেশের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। রেলওয়েতে কর্মরত চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বপালনে নানা অনিয়ম, অবহেলা কারণে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার আশানুরূপ অগ্রগতি আজও হয়নি।
তিনি রেলওয়ের দুর্নীতি, দলীয়করণ ও অনিয়ম দুরকরণে সর্বপর্যায়ে জবাবদিহিতা বাড়ানো এবং রেলচালক ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি নজর দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের প্রতি আহবান জানান।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে ২০২০-২১ সেশনের জন্য আকতারুজ্জামান কে সভাপতি ও সেলিম পাটোয়ারী কে সাধারণ সম্পাদক করে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত করা হয়।কাউন্সিলে রেলের অগ্রগতি ও শ্রমিকদের স্বার্থবিবেচনায় ১৬ দফা প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
১। দ্রততার সাথে খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
২। পদ্মা সেতুর শুরুতে রেলপথ সংযোগ সহ ঢাকা-মংলা ও ঢাকা-বরিশাল রেলপথ নির্মান করতে হবে।
৩। লাকসাম-ঢাকা কর্ড রেলপথ, বগুড়া-জামতৈল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, ভাটিয়ারী-ষোল শহর বাইপাস সহ প্রস্তাবিত সকল রেলপথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪। নিরাপত্তা ও দ্রুতগতির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ লেবেল ক্রসিং সমূহে আন্ডারপাস ও ওভারপাস চালু করতেহবে।
৫। পাহাড়তলী, সৈয়দপুর, কেলোকা-কারখানা সমূহকে আধুনিকায়ন করে ইঞ্জিন কোচ ও ওয়াগন সংযোজনের কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬। রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি লক্ষ্যে বন্দরে হ্যান্ডলিংকৃত কন্টেইনারের ৫০% রেলের মাধ্যমে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। ১১ নং স্কেল হতে ২০ নং স্কেল পর্যন্ত বেতন বৈষম্য দুর করতে হবে।
৮। রেলওয়ে আবাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে।
৯। মহিলা কর্মচারীদের জন্য চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, পৃথক এবাদতখানা ও ওয়াশ রুম এর ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। পেনশন ৯০% এর স্থলে ১০০% এবংগ্রাচুইটি প্রতি টাকায় ২৩০ টাকার এর স্থলে ৪০০ টাকা করতে হবে।
১১। রেলের পতিত জায়গা সমূহে মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল মোটেল ও আবাসন প্রকল্পনির্মানকরে রেলের আয়বৃদ্ধি করতে হবে।
১২।প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজে ৪০% কোটা নির্ধারণ পূর্বক ৫০% রেয়াতীহারে রেলপোষ্যদের অধ্যায়নের সুবিধা দিতে হবে।
১৩। শুণ্য পদেও বিপরীতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেলপোষ্যদের চাকুরী নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। এলএম, এএলএম, ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ, অফিস সহকারী, মেডিকেল স্টাফ, ট্রেড এ্যাপ্রেন্টিস ও অফিস সহায়কদের ও ন্যায্য দাবী সমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৫। ট্রাফিক স্টাফ, রানিং স্টাফ, ষ্টেশনমাষ্টার ও অন্যান্য কর্মচারীদেও পদ সমূহের অনুকুলে আদালতে রায় অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
১৬। ১১ই নভেম্বর রাত পৌনে তিন ঘটিকার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ ষ্টেশনের আউটার ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে আন্তঃনগর তুর্নানিশীথা ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য সংগঠনের পক্ষহতে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছি। একইসাথে দুর্ঘটনায় যে সমস্ত যাত্রী নিহত হয়েছে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের আত্মীয় স্বজনদেরও প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যে সমস্ত যাত্রী আহত হয়েছে তাদের দ্রুত সু-চিকিৎসা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সাথে অভিজ্ঞ এবং কর্মঠ গার্ড ও চালকদের দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছি।
১৭। বি.আর.ই.এলএর পেশকৃত সুপারিশ মালা বাস্তবায়ন করতে হবে।