২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৩০ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন:
“অর্থমন্ত্রী জনাব আ.হ.ম মোস্তফা কামাল ১১ জুন জাতীয় সংসদে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট পেশ করেন। প্রস্তাবিত ঐ বাজেটের উপর আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কতিপয় প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অর্থনীতিবিদগণের পক্ষ থেকে বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে জনগণের স্বার্থে কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। ঐ সব সুপারিশ ও প্রস্তাবনা বিবেচনায় না নিয়ে আজ ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের সুবিধা মত একটি বাজেট জাতীয় সংসদে পাশ করানো হলো। এ বাজেট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলে আসছেন। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি বাজেটে অবৈধভাবে টাকা উপার্জনকারী অর্থাৎ কালো টাকার মালিকদের টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে মূলত দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।
এ বাজেটের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
করোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছেন মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ভঙুর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি বেপরোয়া রূপ লাভ করেছে। শুধুমাত্র একটি হাসপাতালের নাস্তা ও যাতায়াত বিল হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এ থেকে বুঝা যায় দুর্নীতির প্রচÐতা। ভঙুর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতি উৎখাত করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা ও পুরাতনগুলোকে সমৃদ্ধ করা। এ ব্যাপারে বাজেটে কোনো ধরনের দিক নির্দেশনা রাখা হয়নি।
দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য মুখে গুরুত্ব দেয়া হলেও বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি ও আত্মসাৎ। ইতোমধ্যেই দুর্নীতির কারণে নির্বাচিত অনেক প্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হলেও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো দিক নির্দেশনা বাজেটে উল্লেখ করা হয়নি।
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। আজ যে বাজেট পাশ করা হলো তাতে উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাসের কোনো কথা বলা হয়নি। বরং রাসায়নিক সারের গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। করোনা ভাইরাসের কারণে শিল্পখাতে ব্যাপক ধস নেমেছে। শিল্পখাতকে উদ্ধারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে ঢালাওভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পাটকলগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থনীতিতে একটি নতুন সংকটের অবতারণা করা হচ্ছে।
প্রবাসীদের মধ্যে যারা কর্মহীন হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছেন তাদের পুনর্বাসনে বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা রাখা হয়নি।
আম্ফানে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ২৬টি জেলার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-কালভার্ট-বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে বরাদ্দ রাখার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আগে অর্থ খরচ করবেন, যেখান থেকে পারেন, সেখান থেকে অর্থ আনবেন। আয়ের ব্যবস্থা করবেন পরে। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য জনগণের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। আয় না হলে ব্যয় হবে কোথা থেকে?
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, ‘যে সংকটই আসুক, সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে।’ আমরা লক্ষ্য করছি করোনা ভাইরাস, সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও উত্তর বঙ্গে বন্যায় আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত দৃশ্যমান কোনো ভূমিকাই সরকার রাখতে পারেনি।
আমরা মনে করি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে যে বাজেট পাশ করা হলো, তা দেশ ও জাতির জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কার্যত এই বাজেট পাশের মাধ্যমে দল ও গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে।”