আজ ১১ ফেব্রুয়ারি। শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীনের ১৬ তম শাহাদাত বার্ষিকী।
খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় আততায়ীর শক্তিশালী রিমোট বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন শহীদ বেলাল। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্হায় ১১ ফেব্রুয়ারী জুমাবার সকলকে কাঁদিয়ে তিনি শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। ঢাকা বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত তাঁর নামাজে জানাযায় ইমামতী করেন অধ্যাপক গোলাম আযম (রাহিমাহুল্লাহ) এবং খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের জানাযায় ইমামতী করেন শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ( রাহিমাহুল্লাহ)।
সে মর্মান্তিক শাহাদাতের স্মৃতি যেমন আমাদেরকে আজও কাদাঁয়, তেমনি বাতিলের বিরুদ্ধে এক অজেয় শক্তিতে আমরা অনুপ্রাণিত হই।
খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রিয় বেলাল ভাই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ছিলেন আল্লাহর রাহে নিবেদিত দা’ঈ। ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় এই সৈনিক ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সদস্য ও খুলনা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন।
সাংস্কৃতির ময়দানে নতুন ধারা সৃষ্টির পথিকৃৎ কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাইয়ের আজীবন সহযোদ্ধা ছিলেন বেলাল ভাই। শাহাদাতের পর শহীদ বেলালের আম্মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মল্লিক ভাই বলেছিলেন,- “এদেশে ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের পহেলা শহীদ আব্দুল মালেক ভাই, আর ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পহেলা শহীদ বেলাল ভাই”।
বেলাল ভাই একটা প্রিয় গান গাইতেন। যেখানেই যেতেন সবাই এ গানটা তার কণ্ঠে শুনতে চাইতেন- “ঝড় যদি ওঠে মাঝ দরিয়ায়, ভয় করি না তাতে”। শহীদ বেলাল মাঝ দরিয়ায় ওঠা প্রচণ্ড ঝড়কে সত্যিই ভয় করলেন না। ২০০৩ সালে খুলনায় ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের এক প্রীতি সম্মেলনে আমাদের অনুরোধে তিনি জীবনের শেষ বারের মত হৃদয়ের সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে গানটি গেয়েছিলেন- জিয়া হলে। তাঁর ভিডিও চিত্রে জীবন্ত বেলালের সেই কণ্ঠ-সেই প্রাণের আকুতিমাখা গান গাইতে দেখা যায়। দেখলে অশ্রু ঝরে। কিন্তু সেই অশ্রু সামলানো যায় না। সেই গানে তিনি হাসান-হোসাইন, হামজা, খাব্বাব, বেলাল, ইমাম তাইমিয়া, সাইয়েদ কুতুব ও শহীদ মালেকের ঠিকানায় যেতে চেয়েছেন। আল্লাহ তার সেই মুনাজাত কবুল করেছেন। উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে সে তরী রেখে গেছেন।
আর গেয়েছেন- “সে তরী বাধা না মানে”।
আমরা শহীদ বেলালের রেখে যাওয়া সে তরীর যাত্রী। এ তরী কূলে ভেড়াতেই হবে। শহীদ বেলালের শাহাদাত এ তরীর যাত্রীদের প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে। আমাদের সে যাত্রা অপ্রতিরোধ্য, অদম্য এবং মৃত্যুভয়হীন চেতনায় শাণিত হোক। আরো দুরন্ত- নির্ভয় হোক।
শহীদ বেলালকে আল্লাহ রহমানুর রাহীম জান্নাতুল ফেরদৌসে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমীন।