বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের প্রায় ৮০শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। কৃষকই দেশের সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষিকাজে আবহমানকালের ব্যবহৃত গরু, মহিষ, লাঙল-জোয়ালের দিন এখন শেষ। কৃষক প্রয়োজনে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে যে শুধু চাষাবাদ করছে তা-ই নয়, বরং শস্যকর্তন ও মাড়াই কাজেও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। চাষাবাদে উন্নত বীজ, সার, সেচ, কীটনাশকসহ রোগবালাই ও আগাছা দমনে ওষুধ ব্যবহার করছে। ইদানীং কৃষিকাজে কৃষি শ্রমিকের অভাবে মজুরি অনেক হওয়ায় চাষাবাদে কৃষকের প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। প্রতি মওসুমে প্রতিটি প্রান্তিক কৃষককে অবস্থাভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় অথবা ধারদেনা করে আবাদের কাজে হাত দিতে হয়। হাতেগোনা কয়েকজনকে বাদ দিলে বেশিরভাগ কৃষক অল্প জমির মালিক কিংবা বর্গাচাষী হওয়ায় কৃষকের এ টাকার উৎস শুধু তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য বিক্রয়মূল্য; কিন্তু কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। কৃষকের এ কষ্টার্জিত ফসলে লাভবান হচ্ছে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী অসাধু ব্যবসায়ী। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দালাল ১০ টাকায় কিনে বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। অন্যদিকে বর্ষা মওসুমের উৎপাদিত বোরো ধান নিয়ে চাষী পড়ছে বিপাকে।
তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা বলেন, ‘সরকার সব খাতে দায়িত্বহীনতা দেখাচ্ছে। কৃষক ও দেশের নাগরিকদের প্রতি তারা কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের দায়িত্বহীন মনোভাব কৃষি খাতের সংকটের মূল কারণ। তিনি বলেন, কৃষকদের সংখ্যা এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে সরকারের কোনো পরিসংখ্যান নেই কারণ তারা কোনো কৃষি আদমশুমারি করেনি। জনগণকে বুঝতে হবে যে অনির্বাচিত এ সরকারকে বহন করার মূল্য সমগ্র দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। এ জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তোরণের জন্য কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঘোষিত ১-১৫ ডিসেম্বর দেশব্যাপী শ্রমিক সেবাপক্ষ পালনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নং-২১৩৩) খুলনা জেলা শাখা আয়োজিত ফুলতলা উপজেলায় কৃষি শ্রমিক ও দরিদ্র কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ সার, বীজ, কোদাল, কাস্তে ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নং-২১৩৩) ফুলতলা উপজেলা শাখার সভাপতি আবুল হোসেন মোড়লের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা জেলা শাখার উপদেষ্টা মুন্সী মিজানুর রহমান, মুন্সী মইনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গাউসুল আযম হাদী, ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ফেডারেশনের খুলনা জেলা সহ-সভাপতি মুস্তাফা আল মুজাজিদ, জামিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান, ফেডারেশনের খুলনা জেলা সেক্রেটারি আলী আকবার মোড়ল, ফুলতলা উপজেলা ফেডারেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল আলীম প্রমুখ।
প্রদান অতিথি মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, কৃষকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া কোনো রকমে গ্রামের স্কুলে এসএসসি পর্যন্ত পড়াতেই হিমশিম খাচ্ছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক সন্তানের জন্য কমপক্ষে মাসে ১৫ মণ; বছরে প্রায় ২০০ মণ ধান বিক্রি করার প্রয়োজন হয়, যা প্রান্তিক কৃষকের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গত কয়েক বছর ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস এবং ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ব্যয় কৃষককে নাকাল করে ফেলেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ছাড়া সবকিছুরই মূল্য বাড়ে, এতে কারও কিছু যায় আসে না। তাহলে কৃষক কেন তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে না? দেশের জিডিপিতে কৃষকের অবদান অনেক। মনে রাখতে হবে, কৃষিই হল বাংলাদেশের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতির প্রাণশক্তি। দেশকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই কৃষককে বাঁচাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষক জমিতে ধান উৎপাদন করে যেমন দেশের মানুষের অন্ন জোগায়, তেমনি নিজের অন্ন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করে উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশে। উৎপাদনের নিয়ম এমনই। কিন্তু আমাদের বড় সমস্যা হলো, কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পপণ্যের নিয়মটা খাটে না। শিল্পপতিরা এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে। তাদের অর্থবিত্ত তাদের জন্য এই সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করেছে।
এর পরে সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইলে শীতার্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিরতণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মাস্টার ইছহাক আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের উপদেষ্টা মুন্সী মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, মাওলানা মোক্তার হোসাইন, বাহারুল ইসলাম, বিএনপি নেতা শেখ ইমান আলী প্রমুখ।