ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ এবং এই আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ৯ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আইন তৈরি করা হয় মানুষের কল্যাণে। সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বাধীন মতপ্রকাশ ও কণ্ঠরোধ করার জন্যই এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে। সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমনকি ১৫ বছরের বালকও এই আইনের অপব্যবহার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিক্যাল নাইনটিনের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে এই আইনে ৭১টি এবং ২০১৯ সালে ৬৩টি মামলা করা হয়। চলতি বছর ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে। এ আইনে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৭ জুন ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিনসহ পত্রিকাটির বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে এ আইনে ৩৭ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়।
অভিজ্ঞমহল মনে করেন সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং সরকার দলীয় লুটেরারা যাতে অবাধে দুর্নীতি করতে পারে তার জন্যই এই হয়রানিমূলক আইনটি করা হয়েছে। মূলত এই আইনকে সরকার নিজেদের দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিপীড়নমূলক আখ্যায়িত করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটি বলছে- সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনাকারী অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং অন্যদের হয়রানি ও অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখতে অবমাননাকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। বাকস্বাধীনতা রক্ষায় আইনটি সংশোধন বা বাতিলের জন্য প্রশাসনের অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মনে করে এইচআরডব্লিউ।
দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণকারী ও নিপীড়নমূলক এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ এবং এই আইনে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”