বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশ ও জাতির উপর একের পর এক অত্যাচার, জুলুম ও খড়গের হাতিয়ারগুলো এভাবে একের পর এক নেমে আসে, তখন তারাই সাংবাদিকরাই জাতিকে জাগ্রত করে। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট দিয়ে সাংবাদিক, জনগনের কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ, ২০ দলের অন্যান্য দলের উপরও নানা আইনী, প্রশাসনিক খড়গ চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা সকলেই জুলুমের শিকার। তিনি অবিলম্বে এই কালাকানুন বাতিল করার দাবী জানান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী গনতন্ত্রের পক্ষে, বাক স্বাধীনতার পক্ষে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সকল আন্দোলন সংগ্রামে আকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে। তিনি সাংবাদিকদের নির্ভীকভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ধ্বনি আমরা শুনতে পাবো, সরকার জনগনের কাছে যেতে ভয় পায়, তারাই এ ধরনের কালাকানুন তৈরি করে, ডুবন্ত মানুষ যেমন কচুরিপানা ধরে বাচতে চায়। এখন ফ্যাসিবাদী সরকার সেই খড়কুট ধরে বাচতে চায়।
আজ শনিবার সকালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের আয়োজনে মুক্ত সাংবাদিকতার অন্তর্ধান দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকে মুক্ত সাংবাদিকতার অর্ন্তধান দিবস পালন করা হচ্ছে, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তে যে কালো আইন পাস করা হয়েছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট, ২০১৮, সেটা আবারো জাতিকে স্মারণ করিয়ে দেয়ার জন্য। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, ৩০ জুন, আইসিটিসহ ধারাবাহিক জুলুম নির্যাতনের কথা যাদের মনে আছে, তখন আমরা বুঝতে পারি, ফ্যাসিবাদী, আধিপত্যবাদী সরকার যখন ক্ষমতায় থেকেছে, তখন সাংবাদিকতা কখনই মুক্ত থাকেনি। সাংবাদিকতা সব সময় অবরুদ্ধ।
তিনি বলেন, আজকের এই প্রতিবাদ যথার্থ। নতুন করে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টটা করে, এটা এমন একটা কালাকানুন, এই আইনের ২০টি ধারার মধ্যে ১৪টি ধারাই করা হয়েছে জামিন অযোগ্য করে। এখানে পুলিশকে এতো ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, পুলিশ যদি ধারনা করতে পারে, কারো দ্বারা কোন ক্ষতি হতে পারে, তখন তাকে গ্রেফতার করতে পারে। পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, সরকারের ইচ্ছা পূরণের জন্য যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। ফলে মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন দ্রুত আর কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে দ্রুত। একের পর এক যেভাবে মামলা হচ্ছে, এক আলোচক বলেছেন, দুই হাজার মামলা হয়েছে, অধিকাংশই প্রমান করতে পারেনি।
তিনি বলেন, এই আইনকে আমরা কালো আইন বলবো, মৌলিখ মানবাধিকার পরিপন্থী আইন বলবো। এই আইন অবিলম্বে বাতিল হওয়া উচিত। আইনটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
গোলাম পরওয়ার বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ৩৯ এর ‘এ’ ও ‘বি’ তে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের ভাব প্রকাশের অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চিয়তা দান করা হয়েছে। আবার আর্টিকেল ২৬ এ বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকার ও তার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল আইন বাতিল যোগ্য। তিনি বলেন, যেখানে ফ্রিডম অব প্রেস বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, সেই ধরনের আইন বাতিল যোগ্য। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিকদের জুলুমের খড়গ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এর আগের আইন ছিল আইসিটি এ্যাক্ট। সেটা ২০০৬ সালে হয়েছে, ২০১৩ তে সংশোধনী হয়েছে, তারপর থেকে ধাপে ধাপে জুলুম নিযার্তন, গ্রেফতার চলছে। সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়েছে, এডিটর কাউন্সিল ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই আইন পাস হলেও ১৭ সেপ্টেম্বর এই আইনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছিল। এর খসড়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু ফ্যাসিবাদি সরকার সেই আইনকে বহাল রেখে আমাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করেছে। তিনি উল্লেখ্য করেন, সাংবাদিকদের কন্ঠের সাথে আমরাও বলতে চাই, এই আইন বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে পুলিশ খুজে পাচ্ছে না। তাকে বঙ্গভবনে দেখা যায়। তিনি ক্ষমতাসীনদর দলের সভায় যাচ্ছেন। সরকারের মন্ত্রীর সাথে উপস্থিত থেকে চুক্তি করছেন, নিয়মিত টেলিভিশনের টকশোতে যাচ্ছেন। পুলিশ তাকে খুজে পাচ্ছে না। অথচ এই আইনে পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়ার কারনে মানুষকে হয়রানী করছে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি, যখনই ভোটাধিকার নিয়ে প্যানিক তৈরি হয়, তখনই সরকার কোন না কোন কালাকানুন চাপিয়ে দেয়। ২০১৩ সালের আইসিটি আইন সংশোধন করা হলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আইন সংশোধন করে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হলো। ২০১৮ সালের আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট করা হলো।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী, অগনতান্ত্রিক সরকার যখন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়, তখন এই ধরনের আইন চাপিয়ে দেয়। যারা ভোটকে ভয় করে, ভোটাধিকারকে ভয় করে, তারা সব সময় জনগনের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ভোট যদি অবাধ হয়, ভোটাররা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, জনগন যদি তাদের স্বাধীন মতামত দিতে পারে, তাহলেতো অত্যাচারি, ফ্যাসিবাদী সরকারের খবর থাকবে না। সেজন্য ক্ষমতায় আকড়ে থাকার জন্য যতধরনের কালাকানুন আছে, তা তারা তৈরি করে। সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করতে চায়। যতটুকু চিৎকার দিতে পারে, সেটাও বন্ধ করতে চায়।